সূরা আল-কারিআহ মাক্কি সূরাসমূহের মধ্যে অন্যতম। এটি পবিত্র কুরআনের ১০১তম সূরা। এর আয়াত সংখ্যা ১১টি।
এ সূরার প্রথম শব্দ আল-কারিআহ। কারিআহ অর্থ সজোরে আঘাতকারী। কিয়ামত বা মহাপ্রলয় পৃথিবীকে সজোরে আঘাত করবে বলে একে কারিআহ বলা হয়। এ সূরায় কিয়ামতের নানা অবস্থার বর্ণনা করা হয়েছে। এজন্য এ সূরার নাম রাখা হয়েছে আল-কারিআহ বা মহাপ্রলয়।
তৎকালীন আরবে মানুষ যখন পারস্পরিক দ্বন্দ্ব-সংঘাত, লুটতরাজ ও পাপাচারে লিপ্ত ছিল তখন তাদেরকে কিয়ামতের মহাপ্রলয় এবং হাশরের বিচার ও দোযখের কঠিন শাস্তির কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে এ সূরাটি নাজিল হয়েছে।
শব্দার্থ
الْقَارِعَةُ - মহাপ্রলয়, সজোরে আঘাতকারী
يوم - দিন
الْفَرَاشِ - পতঙ্গ
الْمَبْثُوثِ - বিক্ষিপ্ত, ছড়ানো-ছিটানো
الجبال - পর্বতসমূহ
الْعِهْنِ - রঙিন পশম
الْمَنْفُوشِ - ধুনিত
تقلت - ভারী হবে
مَوَازِينُ - পাল্লাসমূহ, পরিমাপ দণ্ডগুলো
عِيشَة - জীবন, জীবিকা
رَاضِيَة - সন্তোষজনক
ام - স্থান, জায়গা, ঠিকানা
حَاوِيَةٌ - হাবিয়া, গভীর গর্ত, এটি একটি জাহান্নামের নাম
تار - আগুন
حامية - উত্তপ্ত, প্রজ্বলিত, জ্বলন্ত
অনুবাদ
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
দয়াময়, পরম দয়ালু আল্লাহর নামে।
الْقَارِعَةُ
১. মহাপ্রলয়।
مَا الْقَارِعَةُ
২. মহাপ্রলয় কী?
وَمَا أَدْرَكَ مَا الْقَارِعَةُ
৩. আপনি কি জানেন মহাপ্রলয় কী?
يَوْمَ يَكُونُ النَّاسُ كَالْفَرَاشِ الْمَبْثُوثِ
৪. সেদিন মানুষ হবে বিক্ষিপ্ত পতঙ্গের মতো।
وَتَكُونُ الْجِبَالُ كَالْعِهْنِ الْمَنْفُوشِ
৫. আর পর্বতসমূহ ধুনিত রঙিন পশমের মতো হবে।
فَأَمَّا مَنْ ثَقُلَتْ مَوَازِينُهُ
৬. অতঃপর সেদিন যার পাল্লা ভারী হবে।
فَهُوَ فِي عِيشَةٍ رَاضِيَةٍ
৭. সে লাভ করবে সন্তোষজনক জীবন।
وَأَمَّا مَنْ خَفَّتْ مَوَازِينُهُ
৮. আর যার পাল্লা হালকা হবে।
فَأُمُّه هَاوِيَةٌ
৯. তার স্থান হবে হাবিয়া।
وَمَا أَدْرَيكَ مَا هِيَهُ :
১০. আপনি কি জানেন তা কী?
نَارٌ حَامِيَةٌ
১১. তা অতি উত্তপ্ত আগুন।
ব্যাখ্যা
সূরা আল-কারিআহতে আল্লাহ তায়ালা দুই ধরনের বিষয় উল্লেখ করেছেন। সূরার প্রথম পাঁচ আয়াতে আল্লাহ তায়ালা কিয়ামত বা মহাপ্রলয়ের অবস্থা বর্ণনা করেছেন। কিয়ামতের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা সমগ্র পৃথিবী ধ্বংস করবেন। এজন্য এ সূরায় তিনি আল-কারিআহ বা মহাপ্রলয় শব্দটি ব্যবহার করেছেন। এর মাধ্যমে কিয়ামতের অবস্থা বর্ণনা করেছেন। সেদিন এ পৃথিবীর কোনো কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না। বড় বড় পাহাড়-পর্বত পর্যন্ত সেদিন ধুনিত পশমের ন্যায় উড়তে থাকবে। মানুষ কীটপতঙ্গের ন্যায় বিক্ষিপ্ত হয়ে পড়বে। আসমান, জমিন, সাগর, নদী, বন-জঙ্গল সবকিছুই সেদিন ধ্বংস হয়ে যাবে। সেদিন শুধু আল্লাহ তায়ালা থাকবেন। তিনি ব্যতীত সবকিছুই ধ্বংস হয়ে যাবে।
এ সূরায় দ্বিতীয় পর্যায়ে শেষ ৬টি আয়াতে আল্লাহ তায়ালা দুনিয়ার কাজকর্মের পরিণতি বর্ণনা করেছেন। হাশরের ময়দানে সমস্ত মানুষের হিসাবনিকাশ নেওয়া হবে। মানুষের পাপপুণ্য পাল্লায় ওজন করা হবে। দুনিয়াতে যে ব্যক্তি পুণ্য বা নেক কাজ করবে, তার পুণ্যের পাল্লা ভারী হবে। সে লাভ করবে চিরশান্তির জান্নাত। সে সেখানে সন্তুষ্ট চিত্তে বসবাস করবে। অপরদিকে যার পুণ্যের পাল্লা হালকা হবে তার পাপের পাল্লা ভারী হবে। তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। হাবিয়া নামক দোযখ হবে তার বাসস্থান। হাবিয়া খুবই গভীর সস্থান। এতে রয়েছে উত্তপ্ত আগুন। সেখানে পাপীরা কঠিন শাস্তি ভোগ করবে।
শিক্ষা:
আমরা এ সূরাটি অর্থসহ মুখস্থ করব। এ সূরার শিক্ষা অনুসারে সর্বদা ভালো কাজ করব। অন্যায় ও পাপ কাজ থেকে বিরত থাকব।
বাড়ির কাজ: শিক্ষার্থী সূরা আল-কারিআহর শিক্ষাগুলো লিখে বাড়ি থেকে একটি পোস্টার তৈরি করে নিয়ে আসবে। |